কিশোরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের মামলার প্রধান আসামি বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়াকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ১নং রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মণকচুরী গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের জয় কৃষ্ণ বর্মনের স্ত্রী গীতা রানী বর্মনের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার সকালে র্যাব-২ এর সহযোগীতায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোরগঞ্জ র্যাব-১৪ এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করে।
গ্ৰেফতারকৃত ইদ্রিস মিয়া সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের ব্রাক্ষণকচুরী এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। এছাড়াও তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য, রশিদাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বিএনপি সমর্থিত রশিদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। উল্লেখ্য, দলীয় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত ১ অক্টোবর ইদ্রিস মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি।
র্যাব জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিন বিকাল তিনটার দিকে ইদ্রিস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ব্রাহ্মণকচুরি গ্রামের প্রয়াত জয় কৃষ্ণ বর্মণের স্ত্রী গীতা রানী বর্মণের (৬৫) বাড়িতে আক্রমন করে। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর করে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে। পরে ঐদিন সন্ধ্যায় আবার দ্বিতীয় দফা হামলা করে নগদ ১৫ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ইদ্রিস মিয়া ও তার অনুসারীদের হুমকিতে ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা প্রাণ রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গীতা রানী বর্মণ বাদী হয়ে গত (২৩ সেপ্টেম্বর) সাবেক চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের মিডিয়া অফিসার মো. আব্দুল হাই চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি ইদ্রিস মিয়াকে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ মামলার অন্য আসামিদেরকে গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
জয় কৃষ্ণ বর্মনের স্ত্রী গীতা রাণী বর্মন জানান, ওইদিন বিকেলে ইদ্রিসের নেতৃত্বে একটি দল তাদের বাড়িতে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর শুরু করে। তাদের কাছে হকিস্টিক, ককটেল ও পিস্তল ছিল। তারা সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুঁড়ে। পরে সন্ধ্যার পর পিকআপে করে ইদ্রিসের নেতৃত্বেই ৩০-৪০ জন এসে বাড়ির প্রধান ফটক খুলে নেওয়াসহ ঘরে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, খাট, সোফা, আলমিরা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, ফ্রিজ, টেলিভিশন, পানির সাবমারসিবল মোটরসহ সবকিছু গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় ভুক্তভোগী গীতা রাণীর পরিবার। এখনো তারা বাড়িছাড়া।
আরো জানা যায়, ভুক্তভোগী পরিবারটির পক্ষ থেকে এই ঘটনায় মামলা করার পাশাপাশি প্রতিকার চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
Leave a Reply